সৌর সেচ পাম্প থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাড়া না পাওয়ায় ব্যর্থ হয়েছে সরকারের নির্দেশিকা। তাই সরকার এখন এ খাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের কথা ভাবছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই মাসে 'সৌর সেচ পাম্পের জন্য গ্রিড ইন্টিগ্রেশন গাইডলাইন' শীর্ষক একটি নীতিমালা প্রকাশ করে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)।
এই নির্দেশিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল সোলার পাম্প অপারেটরদের উৎপাদিত নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করতে সহায়তা করা। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় বিতরণ সংস্থাগুলোর পাম্প অপারেটরদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ব্যবস্থা করা।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধার তিন উপজেলায় সোলার পাম্পে সেচ ব্যবস্থা: খুশি কৃষকরা
স্রেডার কর্মকর্তারা জানান, অফিস ও শিল্প ভবনের ছাদে স্থাপিত সৌর কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য থেকে সৌরচালিত সেচ পাম্প থেকে বিদ্যুৎ কেনার ধারণাটি এসেছে।
মৌসুম ব্যতীত অন্য সময়ে সরকার সোলার ইরিগেশন প্ল্যান্ট অপারেটরদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনবে। পাম্প অপারেটররা স্থানীয় বিতরণ গ্রিড লাইন ব্যবহার করে তাদের উৎপাদিত নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রি করতে পারবে।
কিন্তু ডিজেলচালিত পাম্প প্রতিস্থাপনের বদলে সৌর চালিত পাম্প স্থাপনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি এই নির্দেশিকা।
স্রেডার এক কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডিজেলচালিত পাম্পের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার পাম্প সৌরচালিত পাম্পে রূপান্তরিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ সোলার পাম্প, কৃষকের মনে স্বস্তি
কিন্তু স্টেকহোল্ডাররা এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
কুষ্টিয়া ও দিনাজপুর জেলায় সৌর সেচ প্রকল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত দীপাল সি বড়ুয়া জানান, এ পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় তিন হাজার সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) এই সাবেক সভাপতি বলেন, ডিজেলচালিত পাম্পের বদলে সৌর পাম্প প্রতিস্থাপনের ফলে সেচ খরচ ৪০-৫০ শতাংশ কমে যায়।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘ফসলের মৌসুমে কৃষকদের এখন একটি জমির জন্য দুই হাজার টাকা ব্যয় হয়, যেখানে ডিজেলচালিত পাম্পে সেচের জন্য চার হাজার টাকা দিতে হতো।’
পাবনায় প্রায় ৩০টি সেচ পাম্প স্থাপনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, একজন কৃষক বা বিতরণ কোম্পানির জন্য নিষ্ক্রিয় বিদ্যুৎ (অলস বিদ্যুৎ) কেনার জন্য এ ধরনের প্রকল্প উপযুক্ত নয়।
তিনি বলেন, সৌর সেচ উদ্যোগ তৈরির জন্য অবশ্যই একটি ব্যবসায়িক মডেল থাকতে হবে, যেখানে এটি পাম্প অপারেটর ও কৃষক উভয়ের জন্যই লাভজনক হবে।
একই মত ব্যক্ত করে স্রেডার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ এখন সৌর সেচ প্রকল্পটি সফল করতে ব্যবসায়িক মডেল তৈরির জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের কথা ভাবছে।
সম্প্রতি স্রেডা সৌর সেচ পাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী দেশের ডিজেলচালিত সেচ পাম্পগুলোকে সৌরচালিত পাম্পে রূপান্তরের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় আনতে লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য বিদ্যুৎ খাতের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
তিনি স্রেডার কর্মকর্তাদের বলেন, সেচকাজে সৌরচালিত পাম্পের সংখ্যা বাড়াতে পরিকল্পনা অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
কৃষকদের সেচের জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন: ১০ বছর মেয়াদি সোলার রোডম্যাপ প্রণয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে আইএসএ
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ঈদের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
জলবায়ু তহবিল গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কপ-২৮ এ ঘোষিত ক্ষয়ক্ষতি তহবিল থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে।
নসরুল হামিদ আরও বলেন, সোলার সেচ পাম্পের উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ডিজেল পাম্পের ব্যবহার কমালে কার্বন নিঃসরণও কমবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ডিজেল পাম্পে বছরে ১০২৩.৩৪ লিটার ডিজেল খরচ হয়। সরকারকে প্রচুর পরিমাণে ডিজেল আমদানি করতে হয় যা বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় এবং পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন: ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চান প্রধানমন্ত্রী